আজ ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ছবি: প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম আরিফ

সোনার বাংলা গড়তে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা দর্শন দৃঢ়ভাবে এগিয়ে নিচ্ছেন শেখ হাসিনা


প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম আরিফঃ প্রায় তিন শতাব্দী পূর্বে নেপোলিয়ান বলেছিলেন ‘তোমরা আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দিব’। তারও কয়েকযুগ আগে ফঁরাসী দার্শনিক ভলটেয়ার বলেছিলেন, ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড।’ উল্লিখিত বিখ্যাত উক্তি দুটো দিয়ে বুঝা যায় একটি উন্নত জাতি কিংবা রাষ্ট্র গঠনের জন্য শিক্ষা কতটা গুরুত্ববহ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশের শিক্ষাখাত নিয়ে খুব ভেবেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এজন্য প্রাচীন বা সেকেলে শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের উপযোগী একটি সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থা গড়তে চেয়েছিলেন তিনি। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত ওই কমিশনের সভাপতি ছিলেন ড. কুদরাত-এ-খুদা। কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষাকমিশন রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিলো ১৯৭৪ সালের মে মাসে। ১৯৭৫ সালে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নারকীয়ভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে সেই শিক্ষা কমিশনকে বিলুপ্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর কেটে গেছে কয়েকযুগ।

স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশে যারাই সরকার পরিচালনা করেছে প্রায় সবার আমলেই শিক্ষা খাতে কমবেশি দুর্নীতি লক্ষ্য করা গেছে। পত্র পত্রিকাগুলো সেইসব খবর ফলাও করে ছেপেছে। ২০০৮ সালের পর থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি কিছুটা ব্যতিক্রমী চিত্র। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার বড় ত্রুটি ছিলো সেকেলে পাঠদান পদ্ধতি এবং ঘন ঘন প্রশ্নফাঁস। একটি অসাধু চক্র প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে শিক্ষা খাতের মেরুদণ্ডটাই ভেঙ্গে ফেলতে চেয়েছিলো। এছাড়া বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলোর তুলনায় আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় পাঠদান ও অধ্যয়ন পদ্ধতি ছিলো ত্রুটিযুক্ত। তাই বঙ্গবন্ধুর দর্শন অনুসরণ করে শিক্ষাখাতকে দুর্নীতিমুক্ত এবং যুগপোযুগী করার জন্য দৃঢ়ভাবে লড়ছেন বঙ্গবন্ধুর শেখ হাসিনা। তার নির্দেশনায় যুগোপযুগী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন করে এগুচ্ছে দেশ। যখনই যেখান থেকে প্রশ্নফাঁসের অনিয়ম-দুর্নীতির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সমূলে নিপাত করা হচ্ছে দুর্নীতিবাজদের আখড়া। বর্তমানে প্রশ্নফাঁস চক্র অনেকটাই নিষ্ক্রিয় বলা চলে। এটা নিঃসন্দেহে শেখ হাসিনা সরকারের বড় অর্জন। বর্তমান সরকার গতানুগতিক সিলেবাস বাদ দিয়ে সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতি চালু করেছেন যা রপ্ত করছেন আমাদের শিক্ষার্থীরা। প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ার কাজ করছে বর্তমান সরকার। ইতোমধ্যে প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষায় দক্ষ হয়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা বিদেশের বিখ্যাত কোম্পানি গুলোতে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে, এতে দেশের সুনাম বাড়ছে। এছাড়া দেশের প্রযুক্তি নির্ভর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে এবং ঘরে বসেও আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করছেন অনেকে।

আরও পড়ুন দক্ষিণ চট্টগ্রামে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি

এ কথা অনস্বিকার্য, শেখ হাসিনার সরকার দেশের পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে শিক্ষার আলোয় উদ্ভাসিত করে জাতির মেরুদণ্ড সোজা করার কাজে মনোনিবেশ করেছেন। এজন্য বাংলাদেশের শিক্ষার অগ্রগতি দেখে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করতে বাধ্য হয়েছে বিশ^ব্যাংক, ইউনেস্কোসহ আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থাগুলো। এসব সংস্থা বলছে, গত এক যুগে বাংলাদেশে প্রায়োগিক সাক্ষরতা বেড়েছে ১৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ। শিক্ষায় নারী-পুরুষের সমতা অর্জনে বাংলাদেশ ছুঁয়েছে নতুন মাইলফলক। একটা সময় ছিলো যখন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি জমাতেন। কিন্তু এখন বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের সরকারি ও বেসরকারি অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলোতে বিদেশের শিক্ষার্থীরাও জ্ঞানার্জন করছেন। এর মাধ্যমে সাশ্রয় হচ্ছে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল শিক্ষায় গুরুত্ব দিচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার ৩০ শতাংশ এবং ২০৫০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এ উদ্যোগের ফলে কারিগরি শিক্ষা গ্রহনের হার লক্ষ্যমাত্রারও অধিক হবে বলে আশা করা যায়। শিক্ষাখাতের এই অভূতপূর্ব ইতিবাচক পরিবর্তন দেশের ইতিহাসে একটি অনন্য ঘটনা যার মূল কাণ্ডারী হলেন শেখ হাসিনা। বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দর্শন অনুসরণ করে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে তিনি বিশ্বমঞ্চে গর্বিত করেছেন। এজন্য জাতিসংঘের ‘এসডিজি প্রগ্রেস অ্যাওয়ার্ড’ এ ভূষিত হয়েছেন তিনি। তবে করোনা মহামারির অভিঘাত, বিশে^র বিভিন্ন প্রান্তে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। এই প্রতিকূল অবস্থা বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকেও প্রভাবিত করছে। বর্তমানে বিশ^ব্যাপী মূল্যস্ফীতির উল্লম্ফন শেখ হাসিনার সরকারকেও কিছুটা বেকায়দায় ফেলছে। প্রাইমারি কিংবা উচ্চশিক্ষা সব পর্যায়ে খরচ বেড়েছে। শিক্ষকদের বেতন কিছুটা বেড়েছে আর শিক্ষার্থীদের খরচও বেড়েছে প্রচুর। সর্বোপরি এ কথা উল্লেখ করতেই হয়, মানসম্পন্ন শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। তাই বিষয়গুলো নীতি-নির্ধারণী মহলের নজরে আসা প্রয়োজন।

লেখকঃ উপাচার্য্য, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি)।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর